গাড়িতে উঠে বসলাম ঠিকই কিন্তু মনের ভেতর খচখচটা থেকেই গেল। কাল রাতেই ঘাটশিলা পৌঁছেছি। যাব দুয়ারসিনি। হোটেলেই বলা ছিল গাড়ির কথা। Ready হয়ে বাইরে এসে দেখলাম দাঁড়িয়ে আছে একটা ভাঙাচোরা ট্রেকার। ও রুটে নাকি কেউ যেতে রাজি না, রাস্তা খুব খারাপ। রাস্তা যদি সত্যিই খুব খারাপ হয় তবে এ গাড়ি নিয়ে যাওয়া তো আরও risky ! মাঝ রাস্তায় খারাপ হলে কি হবে ? বুঝতে পারছি না গাড়িটাকে না করে দেব কিনা এমনি সময় ড্রাইভার সাহেবের অভয় বাণী কানে এল –“আমার গাড়িতে যাচ্ছেন যখন চিন্তা করবেন না”।
কি করে বলি যে ওর গাড়িতে যাচ্ছি ওটাই এখন সবচেয়ে চিন্তার। কিন্তু চিন্তার আরও এখনও বাকি ছিল। দেখি হুড়মুড় করে হোটেলের ম্যানেজার আসছে, সাথে আরও দুজন। এসেই অনুরোধ এই দুজনকে সাথে নেবার। অনেক খুঁজেও তারা নাকি কোন গাড়ি পায়নি। কলকাতা থেকে এসেছেন। দরকারি কাজ। যেতেই হবে। এমনিতে চেহেরা ছবি দেখে ভালোই মনে হচ্ছে তবুও বাইরের দুজন অচেনা লোককে সহযাত্রী করা নিয়ে আমার একটু অস্বস্তি হচ্ছিল। কিন্তু না করতে পারলাম না।
ওনাদের একজন বললেনঃ “আমরা সাথে থাকলে আপনাদের সুবিধেই হবে। আমরা press -এর লোক। গাড়িতে press এর কাগজ সেঁটে দিচ্ছি রাস্তায় কোন সমস্যা হবে না।
আর কথা না বাড়িয়ে আমরা সায় দিলাম।
গাড়ি চলতে শুরু করল। রাস্তা সত্যিই খুব খারাপ। কিছু কিছু জায়গায় রাস্তাই খুঁজে পাওয়া যায় না। ধীরে ধীরে সহযাত্রী দু’জনের সাথে আলাপ জমে উঠলো। এদিকটায় নাকি মাওবাদিদের প্রভাব বেড়েছে। তবে সাধারণ গ্রামবাসীদের তারা নাকি বিরক্ত করে না আর tourist- দের তো কখনোই না। কিন্তু আমার মনের ভেতরটা খচখচ করতেই থাকল। যাচ্ছি দু’দিন নিরিবিলিতে কাটাবো বলে, কোনো বিপদে না পড়তে হয়।
বাইরে দুপাশে লাল মাটির রাস্তা, রুক্ষ জমি। মাঝে মাঝে বাবলা, পলাশ, শিমুল গাছ। এখন বসন্ত কাল। বাতাসে এক অদ্ভুত মাদকতা আছে। রাস্তার দিকে তাকালেই মনটা কেমন উদাস হয়ে যায়। একটা নিঃসঙ্গতা ঘিরে ধরে। কিন্তু এই অনুভূতিটা কষ্টদায়ক নয় মোটেও। বরং বেশ উপভোগ্য। খচখচটা ওই অনুভূতির গভীরে কোথায় যেন হারিয়ে যেতে লাগল।
চারপাশ বদলাতে শুরু করেছে । গাছপালা বাড়ছে। এখনে রাস্তাও আগের থেকে অনেক ভাল। আস্তে আস্তে গাড়ি চলছে জঙ্গলের মাঝখান দিয়ে। ঘাটশিলা থেকে দুয়ারসিনি ২০ কিমি। গালুডি দিয়েও দুয়ারসিনির রাস্তা আছে। সে রাস্তার অবস্থা নাকি এদিকের থেকে ভাল। রাস্তায় কোন রকম সমস্যা ছাড়াই আমরা দুয়ারসিনি পৌছালাম। গাড়ির start বন্ধ করার পরই চারপাশে নেমে এল অদ্ভুদ এক নিস্তব্ধতাকে। আওয়াজ বলতে শুধু নানা ধরণের পাখির ডাক।
দুয়ারসিনি পুরুলিয়ার দলমা পাহাড়ের পাদদেশে শাল পিয়াল পলাশ শিমুল সেগুন ঘেরা ছোট্ট এক আদিবাসী গ্রাম। থাকার জায়গা বলতে গ্রাম থেকে দূরে জঙ্গলের পাশে রঙবেরঙের বগেনভেলিয়ায় ঢাকা forest department এর এই তিনটে কটেজ, ঠিক যেন খড়ের ছাওয়া সাঁওতাল কুটির। কটেজের ঠিক পেছন থেকেই শুরু হয়েছে জঙ্গলে ঢাকা ছোট্ট পাহাড়। পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে পাহাড়ি ঝোড়া সদগুরুং। তার কূলকুল আওয়াজ কানে আসে কটেজের সামনে থেকেই। আশেপাশে কোনও জনবসতি নেই। বসতি বলতে সেই তিন কিমি দূরের আদিবাসী গ্রাম। প্রকৃতি যেন অনেক ভালোবেসে সাজিয়েছে জায়গাটিকে। এখানে electricity নেই, নেই কোন mobile tower বা land phone এর ব্যবস্থা। আসে না কোন খবরের কাগজও। যেন শহুরে সভ্য সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন এক জগত। তাই আমাদের আসার খবরও ছিল না caretaker এর কাছে। বুকিং এর কাগজ দেখে ঘর ready করে দিল। এদিকটায় লোকজনও বিশেষ আসে না। স্বাভাবিক ভাবেই বাকী কটেজ দুটি ফাঁকা।
রান্নার আর কাজের লোকরা আসে পাশের গ্রাম থেকে। সন্ধ্যের পর তারা ফিরে যায় গ্রামে । রাতে কাছাকাছি থাকে শুধু caretaker। একটু fresh হয়েই আশপাশটা ঘুরে দেখার জন্য বেরিয়ে পরলাম। যাত্রাসঙ্গী রাঁধুনির ‘সাইকেল’। জনমানবহীন ফাঁকা রাস্তা। দুদিকে হালকা জঙ্গল। ওই জঙ্গলের মধ্যে দিয়েই রাস্তার পাশে পাশে আপন খুশিতে বয়ে চলেছে সদগুরুং। ঝোপে ঝাড়ে ফুটেছে নাম না জানা নানা রঙের জংলি ফুল। কানে আসছে কত ধরণের পাখির ডাক। একটু দুরেই রাস্তার ধারে দেখলাম এক আদিবাসী মন্দির (দুয়ারসিনি মায়ের মন্দির)। পাশেই হাঁটের জায়গা আর একটা ভাঙ্গা বাড়ি। চারপাশ জনমানবহীন। কাল এখানে হাঁট বসবে। আরেকটু এগোতেই চোখে পড়ল এক টিলা। কিন্তু সেখানে পৌঁছনোর আগেই আরেক বিড়ম্বনা।
আমাদের পথ আঁটকে দাঁড়ালো এক দল সশস্ত্র বাহিনীর জওয়ান। এতক্ষন কোথাও কেও ছিল না। হঠাৎ কোত্থেকে এল জানিনা। আমি প্রথমটায় ভয় পেয়ে যাই। কিন্তু ওদের সহজ ব্যবহারে আশ্বস্ত হই। আশেপাশে কোন কিচ্ছু নেই, এমন এক জায়গায় দুজন শহুরে মানুষ তাও সাইকেল নিয়ে দেখে ওদের সন্দেহ হয়। এদিকে মাওবাদীদের প্রভাব আছে বেশ ভালোই। তাই তারা আমাদের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চায়। সমস্ত পরিচয়পত্র খুঁটিয়ে পরীক্ষার পর আমাদের টিলায় যাবার রাস্তা দেখিয়ে দিলো। আমরাও সাইকেল নিয়ে এগিয়ে চললাম। অনেকদিন পর এমনভাবে শহুরে জীবন থেকে দূরে এমন সুন্দর জায়গায় ছোটবেলার দিনগুলোর মত সাইকেল করে ঘোরা, এ এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। আমরা চলে গেলাম ভালো পাহাড় পর্যন্ত। কবি শ্রী কমল চক্রবর্তির ১৫ বছরের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় পুরুলিয়ার রুক্ষ বঞ্জর জমি হয়ে উঠেছে ছায়াঘন, সবুজ শ্যামল। ভালোবেসে নাম রেখেছেন ‘ভালো পাহাড়’। পলাশ ফুলে রাঙা হয়ে রয়েছে চারপাশ। রাস্তার আসে পাশে ঢিবি করে পরে আছে টমেটো। আদিবাসী বাচ্চারা রাস্তায় খেলা করছে। মন ভাল করে দেওয়া সুন্দর এক গ্রাম্য পরিবেশ।
ফিরে এসে খাওয়াদাওয়া সেরে একটু রেস্ট নিয়েই বিকেলের দিকে আমরা অলস পায়ে হাঁটা লাগালাম দুয়ারসিনি গ্রামের দিকে। গ্রামের রাস্তাঘাট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। ছোট ছোট মাটির বাড়ি, নানারকম সুন্দর সুন্দর আলপনা আঁকা বাড়ির দেওয়ালে, দরজায়। গ্রামের আশেপাশে প্রচুর কুল আর বট গাছ একসাথে লাগানো আছে। মাটিতে বিছিয়ে পড়ে আছে অজস্র কুল। লোভ সামলাতে না পেরে মনের সুখে কুল কুড়োতে শুরু করলাম। বেশ কিছু বাচ্চা পাশেই খেলা করছিল। গাছের ছায়ায় বসে গল্পে মেতেছিল একদল আদিবাসী মহিলা। একজনের সাথে পরিচয় হল, নাম সালখু। তার সাথে চলে গেলাম তাদের বাড়ি। মাটির বাড়ি, সুন্দর করে লেপা। দেওয়ালে নানা রং দিয়ে ছবি আঁকা। ভেতরে দাওয়ায় পাটি পেতে বসতে দিল। দাওয়ার এক পাশে একটা ঢেঁকি আর কিছু ঝুড়ি রাখা। পরিচয় হল বাড়ির অন্যদের সাথেও। জানলাম এদিকে কুল গাছের সাথে বট গাছের বিয়ে দেওয়ার রীতি প্রচলিত আছে। তাই চারপাশে এত বট আর কুল গাছ। তাদের সাথে কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে সন্ধ্যের আগেই আমরা ফিরে এলাম আমাদের কটেজে। সাথে নিয়ে এলাম অনেক অনেক ভালোবাসা আর সালখুর দেওয়া এক টুকরি কুল।
আমাদের রাধুনিরা সাড়ে সাতটার মধ্যে আমাদের খাইয়ে দাইয়ে গ্রামে ফিরে গেল । আমাদের কটেজ গুলোর থেকে একটু দূরেই caretaker থাকার জায়গা। অসম্ভম ভীতু মানুষ। ঘরের হারিকেন জ্বেলে দিয়ে তিনিও সাত তাড়াতাড়ি কেটে পড়লেন। যাবার আগে সাবধান করে গেলেন যাতে বেশি রাতে কটেজের বাইরে এসে না বসি। এদিকে রাতের দিকে নানা রকম জংলী জানোয়ার ঘোরাফেরা করে। দলমা হাতির দলও নাকি এ রাস্তায় যাতায়াত করে মাঝেমাঝেই। এছাড়া অন্য ভয় তো আছেই। ওরা চলে যাবার পর আমরা কটেজের সামনের বারান্দায় এসে বসলাম। ঘরের এককোণে টিমটিম করে হারিকেন জ্বলছে। বাইরে চারিদিকে ঘন অন্ধকার। আর সেই অন্ধকারের মাঝে জোনাকিদের যেন আসর বসেছে। এদিক ওদিক ছুটোছুটি করে বেড়াচ্ছে আনন্দে। ঝোরার কুলকুল আওয়াজ কানে আসছে। আর বইছে মনে অগুন ধরানো বসন্ত -বাতাস। সেগুন পাতা সেই বাতাসের তালে খসখস শব্দ তুলে তাকে যেন সঙ্গত দিচ্ছে। দূরের থেকে ভেসে আসছে মাদলের আওয়াজ। আমরা চুপ করে বসে আছি। এরকম পরিবেশে কথা বলার দরকার পড়ে না। কথারা তখন ভেসে বেড়ায় নিস্তব্ধতায়। আমি যেন মাদলের তালে হারিয়ে যাচ্ছিলাম। আমার মানস চোখে ভেসে উঠছিল সেই আদিবাসী গ্রামের মানুষগুলো -তথাথিত আধুনিক সমাজ থেকে দূরে একদল সাধারণ গ্রাম্য মানুষ। তারা এখন হয়ত সারাদিনের কাজের শেষে গ্রামে ফিরে মাদলের তালে পা মেলাচ্ছে। অথবা সঙ্গিসাথীদের সাথে মহুয়ার নেশায় নিজেদের ভাসিয়ে দিয়েছে। বড় অদ্ভুত এই মানুষগুলো। অনেক না পাওয়ার মাঝেও একটুখানি পাওয়াকে নিয়ে খুশি থাকতে জানে। আমরা শহুরে শিক্ষিত বোকা মানুষের দল অনেক পাওয়ার দিকে না তাকিয়ে ভাবি ওই না পাওয়াটুকুতেই বুঝি আমাদের সব সুখ লুকিয়ে আছে। তাই তাকে পাওয়ার লোভে ইদুর দৌড় লাগাই। সারা জীবন শুধু দৌড়েই যাই। সেগুন গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে আসা চাঁদের আলো যে কত সুন্দর হতে পারে তা দেখার অবকাশই থাকে না আমাদের জীবনে।
পরেরদিন শিশির ভেজা সকালের মিষ্টি রোদ্দুর গায়ে মেখে আমরা চলে গেলাম ঝোরার ধারে। গিয়ে বসলাম পাথরের উপর। পায়ে আলতো করে ছুঁয়ে যাচ্ছে ঝোরার ঠান্ডা জল। একটা ঠান্ডা ঠান্ডা বাতাস বইছে। সকাল বড় মধুর হয়। তার মিষ্টি আলোয় ঝলমল করে ওঠে চারিদিক। হরেক রকম পাখির দেখা মিলছে এখান থেকে। এদিকটায় প্রচুর সজনে গাছ। সব ফুলে ফুলে সাদা হয়ে আছে। সজনে ফুলের গন্ধ ভেসে বেড়াচ্ছে বাতাসে। মৌমাছি উড়ে বেড়াচ্ছে ফুলে ফুলে। মনোরম এক পরিবেশ যেখানে শুধু বসে থেকেই অনেকটা সময় কাটানো যায়। ফেরার সময় সজনে ফুল কুড়িয়ে এনে বড়া ভাজার জন্য রাঁধুনিদের দিয়ে এলাম। এখানে খাবার দাবার ঘরোয়া কিন্তু সুস্বাদু। সেগুন গাছের মাঝে বাঁশের তৈরি ছাওয়ায় খাওয়ার ব্যবস্থা যেন স্বাদটা আরও বাড়িয়ে দেয়।
আজ হাঁটবার। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চলল। আমরাও চলেছি হাঁটের দিকে। আজ রাস্তায় লোকজনও দেখা যাচ্ছে। কালকের ফাঁকা জায়গাটা আজ লোকে ভরে গেছে। হরেক রকম জিনিস বিক্রি হচ্ছে। একপাশে অনেক লোক ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে দেখে আমরাও এগিয়ে গেলাম। চলছে মোরগ লড়াই। লড়াইয়ের মোরগ যে এত বড় হয় না দেখলে বিশ্বাসই করতাম না। হাঁটের মাঝে আবার দেখা সেই কালকের জওয়ানদের সাথে। আমরা সবাই মিলে গরম গরম চা, সিঙ্গারা আর জিলেপি খেলাম। এদের একেকজনের একেক প্রদেশে বাড়ি। সব ছেড়ে এখানে পরে আছে শুধু আমাদের সুরক্ষার জন্য। একেকজন প্রায় ১০ মাস / এক বছর পর বাড়ি যায়। অনেকে বাংলাও জানে না। দুটো কথা বলবে যে এমন লোকও এখানে মেলে না। হাটের পাশেই যে ভাঙ্গা বাড়িটা দেখেছি কাল ওটাই আগে তাদের ক্যাম্প ছিলো। মাওবাদীরা বিস্ফোরন ঘটিয়ে ওটা ভেঙ্গে ফেলে। তারপর একটু দূরে ওই টিলা পেরিয়ে মাঠের মাঝে temporary camp করেছে এখন। যারা আমাদের নিরাপত্তার জন্য সব ছেড়ে পরে আছে কাল তাদেরই দেখে আমার ভয় পাওয়ার কথা মনে পড়তেই মনে মনে লজ্জা পেলাম। এরাই তো আমাদের সাহস। কিছুটা সময় তাদের সাথে কাটিয়ে আমরা হাঁট ঘুরতে লাগলাম।
টুকিটাকি কেনাকাটা করে যখন ফেরার পালা তখন হঠাৎ চোখে পড়ল হাটের একধারে হাঁড়ি করে বিক্রি হচ্ছে মহুয়া। রাঁধুনিদের আগেই বলা আছে হাঁট থেকে ভালো দেখে দেশি মোরগ নিয়ে যাবার কথা। আজ রাতে দেশি মোরগ roast হবে। আর সাথে যদি মহুয়া থাকে আর কি চাই ! কাল সকালে আমাদের ফিরে যেতে হবে আবার সেই চেনা ইঁদুর দৌড়ের জগতে। আজ রাতটা তাই হোক না অন্যরকম। একদিন না হয় আমরাও উপভোগ করে নিই এদের জীবন। আজ আমরাও শহুরে সভ্য সমাজকে ভুলে মাদলের তালে বাতাসের গান শুনতে শুনতে ভেসে যেতে চাই মহুয়ার নেশায়………
এক নজরেঃ
দুয়ারসিনির forest department ওই কটেজগুলোতে এখন আর থাকা যায় না। আমরা গিয়েছিলাম ২০০৭ এ। এরপর মাওবাদী উপদ্রপ বাড়তে থাকায় এগুলকে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় সরকার। শুনেছি এগুলোকে সারিয়ে আবার নতুন করে খোলার পরিকল্পনা আছে। তবে দুয়ারসিনিতে না থাকা গেলেও অনেকে এখনও ঘুরতে যায়। গালুডি, বান্দওয়ান, ভালো পাহাড় বা ঘাতসিলা থেকে ঘুরে আসতে পারেন দুয়ারসিনি।
কিভাবে যাবেন – আমরা যখন গিয়েছিলাম তখন রাস্তাঘাট খুব একটা উন্নত ছিল না। আর মাওবাদী ভয়ে লোকজন বিশেষ সড়কপথে যেত না। তাই ট্রেনই ছিল একমাত্র ভরসা। ট্রেনে গেলে কলকাতা থেকে ঘাটশিলা যাওয়ার ট্রেন ধরতে হবে। কলকাতা থেকে ঘাটশিলা প্রায় ২৪০ কিলোমিটার। সেখান থেকে দুয়ারসিনি ২০ কিমি। গাড়ী ভাড়া করতে যেতে পারেন।
এখন রাস্তাঘাট অনেক উন্নত তাই সড়কপথে যেতেও কোন অসুবিধে নেই। কলকাতা থেকে সড়কপথে নিজেদের গাড়ী নিয়ে দুয়ারসিনি পৌঁছাতে মোটামোটি ৬ থেকে ৭ ঘন্টা সময় লাগে। সড়কপথে দুয়ারসিনি পৌঁছানোর সবচেয়ে সহজতম দুটি পথ হল –
১। গালুডি হয়ে দুয়ারসিনি পৌঁছানো। গালুডি থেকে দুয়ারসিনি মাত্র ১৭ কিমি রাস্তা। গালুডি থেকে নরসিংহপুরের দিকের রাস্তা ধরে ১২ কিমি গেলেই ঝাড়খণ্ডের সীমানা পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়ায় প্রবেশ। তাঁর থেকে ৪ কিমি দুরেই দুয়ারসিনি।
২। যদি ঝাড়খণ্ডে প্রবেশ না করে পশ্চিমবঙ্গের ভেতর দিয়েই যেতে চান তবে দুয়ারসিনি যেতে পারেন পুরুলিয়ার বান্দওয়ান হয়ে। বান্দোয়ান থেকে দুয়ারসিনি ১৫ কিমি রাস্তা। যেতে সময় লাগে ৩০ মিনিট মতো।
কি কি দেখবেন – দুয়ারসিনির প্রকৃতিই দুয়ারসিনির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। পাখিদের কিচিরমিচির , সদ্গুরুম নদির কুল্কুলানি, ঘন জঙ্গল, নাম না জানা সব জংলী ফুলের বাহারে মন ভরে যায়। দুয়ারসিনির জঙ্গল ভাল্লুক, বুনো শূকর, হাতি, হায়না এবং নেকড়ের মতো বুনো প্রাণীর আবাসস্থল। ভাগ্যবান হলে এদের মধ্যে কাওকে এক ঝলক দেখতেও পেতে পারেন। তবে রাত্রে না থাকা গেলে সে সুযোগ কম।
ঘুরে দেখতে পারেন আশেপাশের উপজাতি গ্রামগুলি। এছাড়া দুয়ারসিনি মায়ের মন্দির, গ্রামের সাপ্তাহিক হাঁট অন্যতম আকর্ষণ।
কোথায় থাকবেন– দুয়ারসিনিতে এখন থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই। ৩ কিমি দূরে কবি কমল চক্রবর্তীর বানানো ভালো পাহাড়ে থাকতে পারেন। এছাড়া গালুডি বা বান্দোয়ানে থাকার বেশ কিছু ভালো হোটেল আছে।